বিমান ভাড়া করে দেশে ফিরতে চায় যুক্তরাষ্ট্রে আটক ৩০০ বাংলাদেশি
ঢাকায় ব্যবসা করেন সিলেটের এক বাসিন্দা। নাম প্রকাশ করতে চান নি। গত ১৫ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ব্যবসায়িক কাজে গিয়েছিলেন। সঙ্গে তার পরিবার ছিল। বিমানের ফিরতি টিকিটও ছিল। তখনও যুক্তরাষ্ট্রে করোনা ভাইরাস ভয়াবহ রূপ নেয় নি।
এক সপ্তাহ পর ওই ব্যবসায়ী দেশে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তখন করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। আকস্মিক ফ্লাইট চলাচল স্থগিত করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রে একের পর এক অঙ্গরাজ্য লকডাউন করা হয়। ফলে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ওই ব্যবসায়ী পরিবারসহ দেশে ফিরতে পারেন নি। তিনি নিউইয়র্কের কুইন্সে এক আত্মীয়র বাসায় আছেন। এ রকম প্রায় তিনশ’ বাংলাদেশি যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে আটকে পড়েছেন। তারা আর ফিরতে পারছেন না। আটকে পড়াদের বেশ কয়েকজন ফোন করে জানিয়েছেন, তারা প্রয়োজনে নিজস্ব উদ্যোগে বিমান ভাড়া করে দেশে ফিরতে চান। এ জন্য সরকারের সহযোগিতা দরকার। তারা যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগাযোগ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।
এরই মধ্যে নিউইয়র্কে করোনা ভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করে। প্রবাসী দেড়শ’ বাংলাদেশিসহ ৩৩ হাজার মানুষ (১৮ এপ্রিল পর্যন্ত) যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এর মধ্যে বেশি মানুষ মারা গেছে নিউইয়র্কে। নিউইয়র্কের রাস্তায় এখন শুধু অ্যাম্বুলেন্সের হুইসেল এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাড়ির শব্দ। মনে হবে এটি একটি ভূতুড়ে নগরী।
অধিকাংশ বাংলাদেশি আটকে পড়েছেন নিউইয়র্কে। তারা প্রতিদিনই শুনছেন পরিচিতদের মৃত্যুর খবর। এতে তারা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। অনেকটাই নিরুপায় হয়ে বাংলাদেশে আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে ফোন, মেসেঞ্জার ও হোয়াটস অ্যাপে যোগাযোগ করছেন। অনেকে আবেগাক্রান্ত হয়ে পড়ছেন।
যারা দেশে ফিরতে পারছেন না, এমন প্রায় তিনশ’ লোক তাদের নামের তালিকাও বাংলাদেশ দূতাবাসে জমা দিয়েছেন। গত এক সপ্তাহ ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছেন। মোবাইলে খুদে বার্তা পাঠিয়েছেন। আকুতির কথা জানিয়ে একটি ই-মেইলও পাঠিয়েছেন বলে জানান তারা। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে যুক্তরাষ্ট্রে দূতাবাসে নামের তালিকা জমা দেওয়ার কথা বলা হলেও কি প্রক্রিয়ায় দেশে আসা যাবে সে বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয় নি।
যুক্তরাষ্ট্রে একাধিক ভুক্তভোগী এ প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ করেছেন, করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আটকে থাকা নাগরিকদের চার্টার বিমানে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। সংশ্নিষ্ট দেশের দূতাবাস থেকেই সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সে ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ দূতাবাস এ ধরনের উদ্যোগ নিতে পারে।
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, তারা দূতাবাসের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তার সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ করছেন। ইতোমধ্যে ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চার্টার বিমানে বহন করতে যে অর্থ ব্যয় হবে তা তারা নিজেরা ব্যয় করবেন। কিন্তু সরকারি উদ্যোগ না হলে সেটি আদৌ সম্ভব নয়। বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনার জন্য তারা সবিনয় অনুরোধ জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এমপি বলেন, বিষয়টি তাকে অবহিত করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে যোগাযোগ করে নাম দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এরপর যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।