করোনায় ফ্লাইট বাতিল : বিক্রি হওয়া টিকিটের অর্থ পরিশোধ নিয়ে জটিলতা
নভেল করোনা ভাইরাস সংক্রমণের প্রভাবে দেশে গত মার্চ থেকে একে একে বন্ধ হয়ে গেছে দেশী-বিদেশী এয়ারলাইনসের আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ সব রুটের ফ্লাইট। যদিও আগে থেকেই বিক্রি হয়েছিল এসব ফ্লাইটের অধিকাংশ টিকিট। এরই মধ্যে যাত্রীদের অর্থ ফেরত দিতে শুরু করেছে অধিকাংশ ট্রাভেল এজেন্সি। তবে বিপত্তি বেঁধেছে ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আয়াটা) অর্থ পরিশোধ নিয়ে। এজেন্সিগুলো বলছে লকডাউন না খোলা পর্যন্ত আয়াটাকে অর্থ পরিশোধ করা সম্ভব নয়। অন্যদিকে অর্থ না পাওয়া পর্যন্ত এজেন্সির টিকিট বিক্রির আইডি বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে আয়াটা।
জানা গেছে, যাত্রীদের কাছে বিক্রি করা টিকিটের অর্থ আয়াটার মাধ্যমে এয়ারলাইনসগুলোকে পরিশোধ করে এজেন্সিগুলো। নিয়ম অনুযায়ী প্রতি ১৪ দিন পরপর আয়াটাকে এ অর্থ পরিশোধ করে ট্রাভেল এজেন্সিগুলো। কিন্তু নভেল করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে হঠাৎ করে লকডাউন শুরু হওয়ায় আগে থেকে বিক্রি হওয়া টিকিটের অর্থ আয়াটার অ্যাকাউন্টে জমা দিতে পারে নি অধিকাংশ ট্রাভেল এজেন্সি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় ২৫ শতাংশ ট্রাভেল এজেন্সির আইডি লক করে ডিফল্টার ঘোষণা করেছে আয়াটা। হুশিয়ারি দিয়েছে জরিমানারও।এ অবস্থায় বিপাকে পড়েছে এজেন্সিগুলো।
ট্রাভেল এজেন্সিগুলো বলছে, ফ্লাইট বন্ধ হওয়ার আগে অনেকেই দেশী-বিদেশীএয়ারলাইনসগুলোর টিকিটও কেটে ছিলেন। পাশাপাশি পর্যটক ভিসা নিয়ে বিভিন্ন দেশে ভ্রমণের জন্য অগ্রিম টিকিট বুকিং দিয়ে ছিলেন অনেক যাত্রী। যদিও ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় পরবর্তী সময়ে বাতিল হয়েছে বেশির ভাগ বুকিং। বাতিল হওয়া এসব টিকিটের অর্থ যাত্রীদের নগদে পরিশোধ করতে হচ্ছে। অন্যদিকে ফ্লাইট বাতিলের আগেই যে সব টিকিটের যাত্রী ভ্রমণ করেছিলেন, সে সব টিকিট বিক্রির অর্থ পাওনা রয়েছে আয়াটার। হঠাৎ করে লকডাউন হওয়ায় যা পরিশোধ করা সম্ভব হয় নি।
বর্তমানে চীন ছাড়া প্রায় সব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের যাত্রীবাহী বিমান চলাচল বন্ধ। এয়ারলাইনসগুলো নিজস্ব কারণে ফ্লাইট বাতিল করলে নিয়ম অনুযায়ী টিকিটের অর্থ ফেরত দেয়ার কথা। কিন্তু সেটি না করে বিদেশী এয়ারলাইনসগুলো পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার ভ্রমণের ভাউচার অফার করছে।
ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অববাংলাদেশ (আটাব) বলছে, এরই মধ্যে দেশীয় এয়ারলাইনসগুলো বাতিল হওয়া ফ্লাইটের বুকিংকৃত টিকিটের টাকা ফেরত দিতে শুরু করেছে। তবে নগদ টাকা ফেরত দিচ্ছে নাবিদেশী এয়ারলাইনসগুলো। ওমরাহ ও পর্যটক ভিসার ১১ হাজার টিকিটের বিপরীতে বিদেশী এয়ারলাইনসগুলোর কাছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা আটকা পড়েছে। এ অবস্থায় বিদেশী এয়ারলাইনসগুলো থেকে ইস্যু করা টিকিটের মূল্য সমন্বয় বা ফেরত না পেলে আয়াটার অর্থ পরিশোধ করা সম্ভব হবে না।
এ প্রসঙ্গে আটাব সভাপতি মনছুর আহমেদ কালাম বলেন, হঠাৎ করে ফ্লাইট বন্ধ হওয়ায় যাত্রীদের মতো এজেন্সিগুলোও সমস্যায় পড়েছে। কেবল সৌদি আরবেই ২৩ হাজার বাংলাদেশীর ওমরাহ ভিসার বিপরীতে ১০ হাজার টিকিট কাটা ছিল। হঠাৎ করে ওমরাহ ভিসা বন্ধের সিদ্ধান্তে অনেক যাত্রী ফ্লাই করে দুবাই এমনকি সৌদি আরব থেকেও ফেরত এসেছেন। আবার ইউরোপ-আমেরিকার অনেক যাত্রীরও ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। এসব টিকিটের টাকা যাত্রীদের ফেরত দিতে হয়েছে। কিন্তু বিদেশী এয়ারলাইনসগুলোর নগদ অর্থ ফেরত না দিয়ে ভাউচার দিয়েছে, যা ভবিষ্যতে টিকিট বিক্রির সময় সমন্বয় হবে। অন্য দিকে আয়াটা নগদ অর্থ চাচ্ছে। আয়াটা যদি এয়ারলাইনসগুলোর সঙ্গে টিকিটের রিফান্ড সমন্বয় করত, তাহলে এজেন্সিগুলো বেঁচে যেত। যেটা তারা করছে না। এরই মধ্যে অনেক এজেন্সির আইডি ব্লক করে দিয়েছে।
জানা গেছে, লকডাউনের আগে পর্যটক ভিসার অন্তত ১১ হাজার বাংলাদেশী যাত্রীর বিদেশী এয়ারলাইনসগুলোর টিকিট কেনা ছিল, যার মূল্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা। এ অবস্থায় বিদেশী এয়ারলাইনসগুলোর রেমিট্যান্স পাঠানো সাময়িক স্থগিত রাখতে বাংলাদেশব্যাংককে চিঠি দিয়েছে আটাব।
একই সঙ্গে সহায়তা চেয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়েও চিঠি দিয়ে সহায়তা চেয়েছে আটাব ও হজ এজেন্সি মালিকদের সংগঠন হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)। চিঠিতে বলা হয়, কেবল ওমরাহ বাতিল হওয়ায় হোটেল, বিমান ও গাড়ি ভাড়াসহ অন্যান্য খরচের জন্য আর্থিক ক্ষতি হবে এজেন্সিগুলোর। ১০ হাজার ওমরাহ যাত্রীর ভিসার জন্য ২০ কোটি টাকার বেশি খরচ হয়েছে। প্রায় পাঁচ হাজার যাত্রীর বিমানের টিকিটও কাটা হয়েছে। বাজেট এয়ারলাইনসগুলো যাত্রা বাতিল করলেও টিকিটের টাকা ফেরত দেয় না। ভিসা করার আগে সৌদিতে থাকার হোটেলের জন্য অগ্রিম টাকা দেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৫০ কোটি টাকা লোকসানের মুখে পড়েছে এজেন্সিগুলো।
প্রসঙ্গত, ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইট চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ(বেবিচক)। তবে এ সিদ্ধান্ত শুধু শিডিউলড প্যাসেঞ্জার ফ্লাইট চলাচলের ক্ষেত্রে। বিশেষ অনুমতি সাপেক্ষে চার্টার্ড ফ্লাইট এ নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে।
বেবিচক জানিয়েছে, এ নিষেধাজ্ঞা আপাতত মোট ১৬টি দেশের ক্ষেত্রে কার্যকর হবে। দেশগুলো হচ্ছে—বাহরাইন, ভুটান, হংকং, ভারত, কুয়েত, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, ওমান, কাতার, সৌদি আরব, শ্রীলংকা, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও যুক্তরাজ্য। তবে কার্গো, ত্রাণ সাহায্য, এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, জরুরি অবতরণ ও স্পেশাল ফ্লাইট পরিচালনার কার্যক্রম চালু থাকবে।
নিউজ সোর্স – বণিক বার্তা