করোনায় তছনছ বিমান চলাচল খাত : এভিয়েশন খাত বাঁচাতে সরকারকে চিঠি
উচ্চ পরিচালন ব্যয়ে এমনিতেই দেশে এয়ারলাইনস ব্যবসা ঝুঁকিপূর্ণ। প্রাণঘাতী ভাইরাসের ছোবলে সারা বিশ্ব আজ বিপন্ন, সবচেয়ে বিপর্যস্ত এভিয়েশন খাত। একের পর এক ফ্লাইট বন্ধে দেশের চারটি বিমান সংস্থার প্রায় সব উড়োজাহাজ এখন গ্রাউন্ডেড। স্থবির হয়ে পড়া দেশের এভিয়েশন খাতে আয়ের পথ রুদ্ধ হলেও ব্যয় থেমে নেই প্রতিষ্ঠানগুলোর। সিভিল এভিয়েশন চার্জ, উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণ, কর্মীদের বেতনসহ নানা ব্যয় টানতে গিয়ে তাদের নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে বলে জানান এই খাতের উদ্যোক্তারা। রিজেন্ট এয়ারওয়েজ তিন মাসের জন্য কার্যক্রম স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে। সরকারের সহায়তা ছাড়া টিকে থাকা দুষ্কর হবে বলে জানান দেশি এয়ারলাইনসগুলোর শীর্ষ কর্তারা। করোনা ভাইরাসের প্রকোপ চলার সময়টায় সরকারের কাছে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো চার্জ মওকুফসহ এভিয়েশন খাতের জন্য পৃথক ‘রেসকিউ প্যাকেজ’ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে বাংলাদেশের সঙ্গে চারটি দেশ ও অঞ্চল ছাড়া আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ৭ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে। এখন শুধু চীনে সপ্তাহে একটি ফ্লাইট চালাচ্ছে ইউএস-বাংলা। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ রুটেও সব ফ্লাইট ৭ এপ্রিল পর্যন্ত স্থগিত হয়ে যাওয়ায় সব উড়োজাহাজ এখন গ্রাউন্ডেড। এতে সব এয়ারলাইনসের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় হাজার কোটি টাকা বলে জানান বিভিন্ন বিমান সংস্থার কর্ণধাররা।
জানা যায়, জাতীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসসহ দেশের চারটি বিমান সংস্থার মোট উড়োজাহাজের সংখ্যা ৪৪। এর মধ্যে শুধু ইউএস-বাংলার একটি উড়োজাহাজ গুয়াংজু রুটে চালু আছে। ফলে সব বিমান সংস্থার ৪৩টি উড়োজাহাজই এখন ‘গ্রাউন্ডেড’ অবস্থায় আছে। এর মধ্যে বিমানের বহরে আছে ১৮টি উড়োজাহাজ, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের বহরে আছে ১৩টি, নভোএয়ারের বহরে আছে সাতটি এবং রিজেন্ট এয়ারওয়েজের বহরে আছে ছয়টি উড়োজাহাজ।
করোনা ভাইরাসের প্রকোপে বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় এয়ারলাইনস ইউএস-বাংলার ২৫০ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে জানিয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, “আমরা গত আট মাসে ছয়টি ব্র্যান্ড নিউ উড়োজাহাজ এনে বহর সম্প্রসারণ করেছি। কিন্তু করোনা ভাইরাস আমাদের পঙ্গু করে দিয়েছে। আমাদের শেষ ভরসা ছিল অভ্যন্তরীণ রুট, সেটিও বন্ধ হয়ে গেছে। ফ্লাইট বন্ধ হলেও ব্যাংকের কিস্তি, উড়োজাহাজের রক্ষণাবেক্ষণ, বিভিন্ন কর, সিভিল এভিয়েশনের নানা চার্জ, বিদেশে সাতটি কার্যালয়ের খরচ, কর্মীদের বেতন চালাতে আমরা চরম সংকটে পড়েছি। রাষ্ট্র বিমানকে দেখ ভাল করছে; কিন্তু বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে আমরা সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছি। এ অবস্থায় ভারত, চীনের আদলে বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলোর জন্য ‘রেসকিউ প্যাকেজ’ ঘোষণার জন্য আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।”
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এভিয়েশন খাতকে টিকিয়ে রাখতে নানা ছাড় দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে ইউএস-বাংলার এমডি বলেন, ‘বিদেশি ক্যারিয়ার হওয়া সত্ত্বেও চীন সরকারের প্রণোদনায় আমরা গুয়াংজুতে ল্যান্ডিং-পার্কিং চার্জে ১০ শতাংশ ছাড় পাচ্ছি। কিন্তু আমরা দেশে এখনো সরকারের কাছ থেকে কোনো আশার বাণী শুনতে পাই নি। আমরা টিকে না থাকতে পারলে বহু কর্মী চাকরি হারাবে, দেশের এভিয়েশন খাত বিদেশিদের হাতে চলে যাবে।’
করোনা ভাইরাস মহামারির আকার ধারণ করায় বিশ্বের অনেক নামি-দামি এয়ারলাইনস দেউলিয়া ঘোষণার দ্বার প্রান্তে। এই খাতকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন দেশ সরাসরি আর্থিক সহায়তা ঘোষণা করেছে। এরই মধ্যে ৬১ বিলিয়ন ডলারের ‘রেসকিউ প্যাকেজ’ ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। চীন নিজ দেশের এয়ারলাইনসগুলোকে প্রণোদনা দেওয়া শুরু করেছে। আন্তর্জাতিক রুটে চলাচলকারী এয়ারলাইনসগুলোকে অর্থ সহায়তা, এভিয়েশন সংশ্লিষ্ট সব ধরনের চার্জ থেকে অব্যাহতি, অভ্যন্তরীণ বিমান সংস্থাগুলোর জন্য জেট ফুয়েলের দাম ৮ শতাংশ হ্রাস করেছে চীন। করোনার হাত থেকে ভারতের বিমান সংস্থাগুলোকে বাঁচাতে ১১ হাজার ৯০০ কোটি রুপির ‘পুনরুজ্জীবন প্যাকেজ’ করছে দেশটির সরকার।
দেশে সরকারের কাছে এ ধরনের জরুরিভিত্তিক প্রণোদনা চেয়ে গত ২৩ মার্চ বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের নির্বাহী পরিচালক এয়ার কমোডর (অব.) গোলাম তৌহিদ। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, করোনা ভাইরাসের পরিস্থিতিতে এভিয়েশন খাত ভবিষ্যতে কত মারাত্মক ক্ষতিতে পড়বে তা নিরূপণ করা যাচ্ছে না। এ ধরনের দুর্যোগে এয়ারলাইনস শিল্প দেউলিয়া হয়ে ধ্বংস হয়। তাই সকল বিমান ও হেলিকপ্টারের যাবতীয় নেভিগেশন, ল্যান্ডিং ও পার্কিং চার্জ পাঁচ বছরের জন্য মওকুফ করা; প্রণোদনাস্বরূপ এভিয়েশন শিল্পকে আগামী ১০ বছরের জন্য বিবিধ আয়কর ও ভ্যাট অব্যাহতি প্রদান; অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক উভয় ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক হারের জ্বালানি মূল্য ধার্যকরণ; যন্ত্রাংশ আমদানি পর্যায়ে ‘আগাম কর’ অব্যাহতি, বকেয়া পরিশোধের ক্ষেত্রে লেট ফি অন্যান্য দেশের মতো বার্ষিক ৬-৮ শতাংশ হারে ধার্য করা; বাংলাদেশি এয়ারলাইনস আন্তর্জাতিক রুটে চলাচল করলেও তাদের উড়োজাহাজগুলোর ল্যান্ডিং, পার্কিং ও নেভিগেশন চার্জ অভ্যন্তরীণ রুটের হারে ধার্য করার দাবি জানাচ্ছি।
করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছে এওএবি (এভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ)। এওএবির মহাসচিব ও নভোএয়ারের এমডি মফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা বর্তমান সংকটকালে সিভিল এভিয়েশন চার্জ, যন্ত্রাংশ আমদানিতে অগ্রিম কর ও জ্বালানির ওপর আরোপিত কর বাতিলের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে দিয়েছি। অন্তত দুই প্রান্তিকে ব্যাংক পাওনা সুদবিহীনভাবে ডেফার্ড পেমেন্টের ব্যবস্থা করা এবং দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ হিসেবে আসন্ন বাজেট প্রস্তাবনায় বিশদ দাবি তুলে ধরার দাবি জানিয়েছি।’
এদিকে করোনা ভাইরাসে সংকটে পড়ে সব কর্মকর্তার ওভার টাইম ভাতা বাতিল করাসহ ১০টি সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। প্রতিষ্ঠানটির এমডি ও সিইও মোকাব্বির হোসেন বলেন, ‘বিমানের টিকিট বিক্রি নেই, উল্টো উড়োজাহাজগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ খরচ ও বিদেশে ১৭টি অফিস চালাতে হচ্ছে। জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে আমাদের ক্ষতি হয়েছে ৪০০ কোটি টাকা। এ অবস্থায় আমরা সরকারের কাছে সহযোগিতা চেয়েছি।’
সরকারের উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মহিবুল হক বলেন, ‘আমরা এয়ারলাইনসগুলোর কাছ থেকে তাদের চাহিদা সংগ্রহ করছি। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’
জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান বলেন, ‘দেশের বিমান সংস্থাগুলোর প্রতি আমাদের সহানুভূতি আছে। আর্থিক বিষয়গুলোতে অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার অনুমোদন নিতে হয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশে এভিয়েশন শিল্পকে বাঁচাতে যেভাবে দেখা হচ্ছে, আমরাও সেই পদক্ষেপ নেব।’
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, ‘দেশের এয়ারলাইনসগুলো মাসে প্রায় ৭০০ কোটি টাকার বাজার নিয়ে কাজ করে। অর্থাৎ এই বাজার বছরে প্রায় আট হাজার ৪০০ কোটি টাকার। ফলে সরকার এগিয়ে না এলে বিদেশিদের কাছে এই বাজার চলে যাবে। সরকারের উচিত এয়ারলাইনসগুলোর সঙ্গে বসা।’
বিমানের আয়ের পথে টান
কেবল টিকিট বিক্রি করে যাত্রী পরিবহন নয়, বিমান অতিরিক্ত ব্যাগেজ চার্জ, কার্গো পণ্য পরিবহন, বাংলাদেশে চলাচলকারী দেশি-বিদেশি বিমান সংস্থাগুলোর পণ্য গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং করে বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করে থাকে বিমান। বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো.মোকাব্বির হোসেন জানালেন, ২০১৯ সালে কার্গো পণ্য ও গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং করে ৯০০ কোটি টাকা আয় করেছিল সংস্থাটি। গড়ে প্রতি মাসে ৭৫ কোটি টাকা আয় করত বিমান। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে আমদানি-রপ্তানি কমে যাওয়া, ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ৯০ কোটি টাকা আয় করেছে তারা। গড়ে আয় হয়েছে মাসে ৩০ কোটি টাকা।
একই ভাবে ২০১৯ সালে বিমান আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ রুটে ২৭ লাখ ৬২ হাজার যাত্রী বহন করেছে। কিন্তু গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে গড়ে বিমানের যাত্রী কমে গেছে ৩৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ। জানুয়ারি মাসে বিমানের সামর্থ্যের চেয়ে ১৫ শতাংশ যাত্রী কম ছিল। ফেব্রুয়ারি মাসে ১৬৫৬ ফ্লাইটের মধ্যে বাতিল হয়েছে ১১৪টি। যাত্রী কমেছে ৫৮ শতাংশ। মার্চ মাসে ৬৯৮টি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। এ কারণে গেল মার্চে বিমানের যাত্রী কমেছে ৪৬ শতাংশ।
বিমানের প্রধান কার্যালয়ে মো.মোকাব্বির হোসেন বুধবার বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের কারণে যাত্রী কমে যাওয়ায় আন্ডার লোড ফ্লাইট প্রচুর চালাতে হয়েছে। এ ছাড়া মার্চ মাসে আমাদের কোনো টিকিট বিক্রি হয়নি। উল্টো আগাম টিকিট যাঁরা কেটেছিলেন তাদের টাকা ফেরত দিতে হয়েছে।’
বিমান কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ১৭টি গন্তব্যে প্রতি সপ্তাহে ২১৮টি ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে। গত ১০ মার্চের পর থেকে বিমানের একের পর এক রুট বন্ধ হয়েছে যেতে থাকে। সবশেষ গত শনিবার ৩০ জানুয়ারি সব শেষ দুটি রুট যুক্তরাজ্যের লন্ডন ও ম্যানচেস্টারে বিমানের ফ্লাইট বন্ধ হয়েছে যায়। ৭ এপ্রিল পর্যন্ত এই দুটি রুটে ফ্লাইট চলাচল স্থগিত করে বিমান। অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট চলছে না বিমানের। এই তিন মাসে টিকিট বিক্রি বাবদ ২৪০ কোটি ১৭ লাখ ফেরত দিতে হবে বিমানকে।
উড়োজাহাজে রক্ষণাবেক্ষণে বড় ব্যয়:
বিমান বহরে বর্তমানে মোট উড়োজাহাজ রয়েছে ১৮টি। এর মধ্যে ২৯৮ আসনের দুটি বোয়িং ৭৮৭-৯ মডেলের ড্রিমলাইনার, ২৭১ আসনের চারটি বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার, ৪১৯ আসনের চারটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর এবং দুটি ১৬২ আসনের দুটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মিলিয়ে বিমানের নিজস্ব অর্থে কেনা উড়োজাহাজ রয়েছে মোট ১২টি। বাকি ছয়টি উড়োজাহাজের মধ্যে চারটি ৭৩৭-৮০০ ও ৭৪ আসনের দুটি ড্যাশ-৮ লিজে আনা হয়েছে। এত বেশি উড়োজাহাজ অতীতে কখনো বিমানের বহরে ছিল না। এর সঙ্গে চলতি বছরের জুনের মধ্যে আরও তিনটি নতুন ড্যাশ-৮ কানাডা থেকে বিমান বহরে নাম লেখাবে। তবে করনোভাইরাসের কারণে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিমানের ১৮টি উড়োজাহাজের সবগুলোই ডানা গুটিয়ে বসে আছে হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে।
আকাশে না উড়ে ডানা গোটানো থাকলেও অত্যাধুনিক উড়োজাহাজগুলোকে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। আর এ জন্য প্রতি মাসে বিমানের প্রয়োজন হবে ২৬০ কোটি টাকা। বিমানের এমডি বলেন, ‘জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত আয় কমেছে। মার্চ মাসে টিকিট বিক্রি হয়নি। কিন্তু বিমানের খরচ যেসব খাতে রয়েছে, সেগুলো কিন্তু রয়ে গেছে। এর মধ্যে ১২টি উড়োজাহাজ বিমানের সম্পদ। এগুলো টিকিয়ে রাখতে হবে। লিজে আনা বাকি উড়োজাহাজগুলোসহ ১৮টি উড়োজাহাজের রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ে এপ্রিল মাসে লাগবে ২৬৬ কোটি টাকা।’
বিমানের এমডি বলেন, লিজ আনা উড়োজাহাজের জন্য এপ্রিলে প্রয়োজন ৯৮ কোটি টাকা। উড়োজাহাজের কিস্তির জন্য ৭০ কোটি টাকা। বিমানের বিশাল কর্মী বহরের বেতন ও বিভিন্ন দেশে অফিস রক্ষণাবেক্ষণ খরচ মাসে ২০৩ কোটি টাকা। এসব কিছুর জন্য এপ্রিল মাসে খরচ ৫৩৭ কোটি টাকা। এ ছাড়া এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে বিক্রি হওয়া টিকিট ফেরত নিয়ে যাত্রীদের দিতে হবে ১৪ কোটি টাকা। এ সঙ্গে গত তিন মাসে রাজস্ব আয়ে ক্ষতি হয়েছে ৪০২ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে বিমান চলতি বছরের তিন মাসে বিমান ১২শ কোটি টাকার বেশি আর্থিক চাপের মধ্যে পড়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে এই অঙ্ক আরও বৃদ্ধি পাবে। তাই সার্বিক বিষয় উচ্চপর্যায়ে অবহিত করা হয়েছে।
ক্ষতি পোষাতে বেতন কর্তন:
রুট ও আয় কমে যাওয়ায় বিমানের সব কর্মকর্তার ওভারটাইম ভাতা প্রদান বাতিল করা হয়েছে। একই সঙ্গে ষষ্ঠ থেকে তদূর্ধ্ব কর্মকর্তাসহ ককপিট এবং কেবিন ক্রুদের মূল বেতনের ১০ শতাংশ হারে কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিমান কর্তৃপক্ষ। গত ২২ মার্চ বিমানের পরিচালক প্রশাসন এ-সংক্রান্ত একটি নির্বাহী আদেশ জারি করে।
হজ মৌসুমে ২০১৯ সালে প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার হজযাত্রী বহন করেছিল বিমান। এবার সেটি নিয়েও অনিশ্চয়তায় রয়েছে বিমান কর্তৃপক্ষ।
বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোকাব্বির হোসেন বলেন, হজ ফ্লাইটের শিডিউল করা হয়েছে। প্রস্তুতি রয়েছে বিমানের। এবার হজ ফ্লাইটের জন্য কোনো উড়োজাহাজ লিজ নেওয়া হবে না।
নিউজ সোর্স – কালের কণ্ঠ